এবিএনএ : প্রখ্যাত সুরকার, সংগীত পরিচালক, গায়ক মুক্তিযোদ্ধা লাকী আখন্দ চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। আজ শনিবার বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে রাজধানীর মিরপুর-১ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান চত্বরে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে তার মরদেহ সমাহিত করা হয়।
এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আরমানিটোলা বাসায় মারা যান তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। দীর্ঘদিন ফুসফুসে ক্যানসারজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি।
তার মরদেহ সমাহিত করার সময় উপস্থিত ছিলেন সংগীতশিল্পী ফুয়াদ নাসের বাবু, লাবু রহমান, শায়েদ ছাড়াও লাকীর সংগীতাঙ্গনের দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও আত্মীয়স্বজন।
এর আগে শনিবার সকাল ১০টার দিকে লাকী আখন্দের জন্মস্থান আরমানিটোলার জামে মসজিদ মাঠে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে লাকীর পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসী অংশ নেন। জানাজা শেষে তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। বেলা সাড়ে ১১টায় শিল্পীকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর সর্বস্তরের মানুষ তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ম্যাজিস্ট্রেট রবীন্দ্র চাকমাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
শহীদ মিনার থেকে বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী ও বাংলা গানের সুরের বরপুত্র লাকী আখন্দের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে নেওয়া হয় দুপুর ১টায়। দুপুর দেড়টায় জোহরের নামাজ শেষে সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
লাকী আখন্দের জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৮ জুন। ৫ বছর বয়সেই তিনি তার বাবার কাছ থেকে সংগীত বিষয়ে হাতেখড়ি নেন। তিনি ১৯৬৩-১৯৬৭ সাল পর্যন্ত টেলিভিশন এবং রেডিওতে শিশু শিল্পী হিসেবে সংগীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন। তিনি মাত্র ১৪ বছর বয়সেই এইচএমভি পাকিস্তানের সুরকার এবং ১৬ বছর বয়সে এইচএমভি ভারতের সংগীত পরিচালক হিসেবে নিজের নাম যুক্ত করেন।
১৯৮৪ সালে সারগামের ব্যানারে লাকী আখন্দের প্রথম সলো অ্যালবাম লাকী আখন্দ প্রকাশ পায়। তিনি ব্যান্ড দল হ্যাপি টাচ-এর সদস্য। তার সংগীতায়জনে করা বিখ্যাত গানের মধ্যে রয়েছে এই নীল মনিহার, আবার এলো যে সন্ধ্যা এবং আমায় ডেকো না।
১৯৮৭ সালে ছোট ভাই ‘হ্যাপী আখন্দের’মৃত্যুর পরপর সংগীতাঙ্গন থেকে তিনি অবসর নেন। দীর্ঘদিনের বিরতি শেষে সম্প্রতি তিনি আবারো অ্যালবাম করছেন দুই বাংলাকে এক সুরে বেঁধে। ১৯৬৯ সালে লাকী আখন্দ পাকিস্তানি আর্ট কাউন্সিল থেকে বাংলা আধুনিক গানে পদক লাভ করেন।
লাকী আখন্দের উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- ‘এই নীল মনিহার’, ‘আমায় ডেকো না’, ‘কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে’, ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’, ‘মামনিয়া, ‘বিতৃষ্ণা জীবনে আমার’, ‘কি করে বললে তুমি’, ‘লিখতে পারি না কোনও গান’, ‘ভালোবেসে চলে যেও না’ প্রভৃতি।